ছোটগল্প : অস্তিত্ব
ছোটগল্প : অস্তিত্ব
লেখক : মোহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম
ব্যাচ : নবম
"মুহিত ঘুম থেকে উঠো," আলিফা মুহিতের গালে আলতো স্পর্শ করে বলে।
"আর একটু ঘুমাই!"
"না। আর ঘুমোতে হবে না। আমাকে ইমার্জেন্সি হাসপাতাল যেতে হবে।"
মুহিত বালিশ হতে মাথা তুলে বিছানার উপর বসে আলিফার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন অনেকদিন পর পরিচিত মুখটাকে এক পলকে দেখার সুযোগ পেয়েছে সে। আলিফা মুহিতের একটা হাত ওর পেটে ঠেসে ধরে বলে, "এর ভেতরটা খুবই অন্ধকার, না? অথচ কী আশ্চর্য! এই অন্ধকারে, প্রকট অন্ধকারে বেড়ে উঠছে একজন, বড় হচ্ছে একজন, ভাবতেই আমার অবাক লাগে। এর উপর হাত রাখলে আমার এত ভালো লাগে আনন্দে চোখ দুটো ভিজে আসে।"
মুহিত মুক্তপানে চেয়ে থাকে একজন নারীর মা হওয়ার আকুলতা-ব্যকুলতা।
আলিফা তাড়াতাড়ি সকালের নাস্তা করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আর মুহিত বারান্দায় দাঁড়িয়ে আলিফার চলে যাওয়া দেখে। এই চলে যাওয়া শেষ চলে যাওয়া নয়, এই চলে যাওয়া মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দেওয়া।
দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ডাঃ আলিফাকে করোনায় আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে সারাক্ষণ। মাঝেমধ্যে মুহিতকে সময় দিতে না পারার জন্য তার ভেতরটা কেঁদে উঠে। পরক্ষণে ভাবে এই মহামারীতে একজন ডাক্তার হয়েও মানুষের সেবা করতে না পারাটা স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ছোটবেলা থেকে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার স্বপ্ন দেখে আসা আলিফা নিজের কাছে নিজে কখনো স্বার্থপর হতে চাই না।
মানুষকে এই রোগ থেকে বাঁচাতে এসে একদিন সে নিজেও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তার সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়, বাকশক্তি হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়। কারণ সে নিজে একা নয় তার ভেতরের বেড়ে ওঠা ভ্রুণটিও আজ করোনায় আক্রান্ত।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটি মুহিতের কাছ থেকে গোপন করে সে। কারণ এতদিন মুহিত বাবা হওয়ার যে স্বপ্নটুকু দেখে আসছে সেটা সে নষ্ট করে দিতে চাই না। আজ মুহিতের জন্য হলেও নিজের ভেতরের অস্তিত্বটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই সে......
No comments