সি.আর. এর গল্প
![]() |
Class Representative |
সেই কারণেই হয়তো, অধিকাংশ সময় শব্দটি শোনার পরে অনেকের মনেই আগ্রহ জাগে, এই শব্দটির সাথে নিজেদের নাম জুড়ে নেয়ার জন্য।
তারপর আসে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ক্লাস আর সেই ক্লাসেই কোর্স কোঅর্ডিনেটর ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্রদের এই মহান দায়িত্ব (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) অর্পণ করে থাকেন।
এরপরেই আসে,সি.আর. শব্দের যথার্থ ব্যাখ্যা।
ক্লাস দেয়া, শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা, সবার আগে ক্লাস এসে মার্কার, ডাস্টার, মাইক্রোফোন নিয়ে আসা, সাউন্ড সিস্টেম ঠিক আছে কিনা সেটা চেক করা, বড় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করা, বন্ধুদের মন জুগিয়ে চলা। এমন করতে করতে একসময়, সি.আর. এর সকালের নাস্তা বলতে আর কিছুই থাকে না। মোবাইলের ব্যালেন্সের কথা আর নাই বললাম। সকালে না খেয়ে, একবারে দুপুরে খাওয়াই হয়ে উঠে তার নিয়মিত রুটিন।
আর দিনের পর দিন এভাবে যেতে যেতে, সি. আর. পরিণত হয় রসকষ বিহীন এক যন্ত্রে। অন্য সাধারণ ছাত্র এর থেকে আলাদা হয়ে, সে হয়ে যায় ক্লাসের সর্ব সাধারনের কামলা।
কামলা কথাটা যেন সি. আর. এর সাথে যথার্থ।
ক্লাসের সব কাজের দায়িত্ব তার একার কাঁধেই। এভাবে চলতে, একসময় চলতে চলে আসে পরীক্ষা। তখন তার দায়িত্ব বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ। স্যারদের কাছ থেকে বারবার ফোন দিয়ে, ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার দুর্গতির কথা বলে, নানান রকম অজুহাত করে, যেভাবেই হোক না কেনো, সাজেশন নামক এক অমূল্য সম্পদ সংগ্রহ করতে হবে।
অনেক চড়াই উৎরাই পার করে, যখন সে সাজেশন সংগ্রহ করে সলভ সহ ব্যাচের কাছে দিতে পারে, তখন সে খুব বাহবা পায়। তবে সেখানেই গল্পটা শেষ না,এরপর সেই সাজেশন থেকে, প্রশ্ন কমনও পড়তে হই। যদি প্রশ্ন কমন না পরে, তাহলে আর রক্ষা নাই সি.আর. এর । সবার সব ধরনের কথা শোনার জন্য, সদা প্রস্তুত থাকতে হয় তাকে।
ভাগ্য ভালো হলে, সে কিছু বন্ধু পায়, যারা তাকে মাঝেমাঝেই সাপোর্ট করে। তবে সুযোগ পেলে, তারাও এক চুল কম কথা শোনায় না কারণ, ঐ একটাই। তার দেওয়া সাজেশন কমন আসে নি আর ঐ বন্ধুর পরীক্ষা খারাপ হয়েছে।
এভাবেই সময়ের কষাঘাতে কেটে যেতে থাকে, একজন সি.আর. এর ক্যাম্পাস জীবন। যেখানে রোজ ক্লাস শেষে সে ফিরে আসে, একরাশ ব্যর্থতার গল্প নিয়ে। আর রোজ রাতে সে ঘুমাতে যায়, পরেরদিন ব্যাচমেটদের প্রত্যাশা আর বাস্তবতা মিলাতে পারবে কি না -- সেই হিসাব কষতে কষতে।
আমিনুল ইসলাম
৯ম ব্যাচ
No comments